Thursday, November 29, 2018

ইরানকে ‘ভাতে’ মারতে চায় যুক্তরাষ্ট্র!


ইরানকে ‘ভাতে’ মারতে চায় যুক্তরাষ্ট্র!
ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র—এটি পুরোনো খবর। নতুন তথ্য হচ্ছে, ইরানে ব্যবসা করা থেকে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বিরত রাখার পাশাপাশি ইউরোপীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে ইরানকে স্রেফ মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। এভাবে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে ইরানকে নতজানু করাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের লক্ষ্য। তাতে ইরানের সাধারণ মানুষ যত ক্ষতিগ্রস্তই হোক না কেন, কিচ্ছু যায়–আসে না!
৫ নভেম্বর ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মুখে বলা হচ্ছে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিলাষ সমূলে উচ্ছেদ করাই এর কারণ। স্বাভাবিকভাবেই হিসাব এত সরল নয়। এর সঙ্গে জড়িত ভূরাজনীতি। আছে আদর্শগত জটিল অঙ্ক ও ক্ষমতা বিস্তারের মার্কিন উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আরব বিশ্বে নিজেদের একাধিপত্য নিশ্চিত করতে ইরানকে ভাতে মারার বিকল্প নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বে তেলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম। নিউজউইক জানাচ্ছে, বিশ্বের বৃহৎ রপ্তানিকারক অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৪৯তম ইরান। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত—দুই ধরনের তেলই রপ্তানি করে দেশটি। গাড়ি উৎপাদন ও গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির শিল্পেও এগিয়ে হাসান রুহানির দেশ। এই শিল্প খাতে কয়েক শ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হিসাব অনুযায়ী, দেশটি বহির্বিশ্বে সোনা ও অলংকার রপ্তানি করে থাকে। এ খাতে বছরে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করে ইরান। 

নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে হুংকার দিয়েছেন। টুইট বার্তায় তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে যে ব্যবসা করবে, সে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবে না। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশ অমান্য করবে, তাদের ওপর পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। শাস্তি দেওয়া হবে তাদের। কেউ কেউ অবশ্য ভাবছেন, এসব হুমকি-ধমকি স্রেফ ভয় দেখানো! তবে অতীত ঘটনা কিন্তু তার ইঙ্গিত দেয় না। এর আগে ২০১৫ সালে, ইরানসহ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা করায় ফরাসি ব্যাংক ‘বিএনপি পারিবাস’-কে নয় বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তেহরানে একটি স্থানীয় কাজ করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হয়ে পড়েছে ইরান। ছবি: এএফপিতেহরানে একটি স্থানীয় কাজ করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হয়ে পড়েছে ইরান। ছবি: এএফপি
নিষেধাজ্ঞা কতটুকু ভয়ংকর? 
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি যেন অস্ত্র তৈরির দিকে না যায় এবং এই কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। তাঁর আমলের অন্যতম কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে বিবেচনা করা হয়। অথচ ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই এই চুক্তিকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষতক সেটিই করে দেখান তিনি। চুক্তি থেকে সরে এসে ইরানের ওপর পুরোমাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, ইরানের কাজকর্মে চুক্তি ভঙ্গের মতো কিছুই ছিল না!

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট বলছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরাসরি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু পরোক্ষভাবে হুমকি সৃষ্টি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যারা ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবে না, আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে। ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইরানের পাশাপাশি মার্কিন বাজারেও পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে থাকে। এখন ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করায় যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢোকা না যায়, তবে বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই ভয় থেকেই অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ইরান থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। যেমন: ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও এয়ার ফ্রান্স তেহরানে ফ্লাইট আনা-নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফরাসি জ্বালানি কোম্পানি টোটাল ও জার্মান প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান সিমেন্স বলে দিয়েছে, ইরানে আর প্রকল্প নয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ফরাসি কোম্পানি ইরান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ছবি: এএফপিফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ফরাসি কোম্পানি ইরান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ছবি: এএফপি
সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে ইরানের আমদানি-রপ্তানি খাত। দেশটির ব্যাংক খাতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ব্যবস্থা থেকে বিযুক্ত হয়ে গেছে ইরান। আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেন আর করা যাচ্ছে না। ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, মানবিক সাহায্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতেও বেকায়দায় পড়েছে ইরান। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মুখে বলছে, এসব আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই; কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়মকানুনে তার প্রতিফলন নেই। ফলে, ওষুধ রপ্তানি করলেও অনেক ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন অ্যালান এন্সলেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন না, কখন আপনাকে লক্ষ্যে পরিণত করা হবে। গতকাল যেটি সত্যি ছিল, আজ তা মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর হুমকির মুখে ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত কয়েক দিনের মধ্যেই অনেক বিদেশি ব্যাংক ইরানের সঙ্গে লেনদেনে আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে করে ভয়ংকর বিপদে পড়বেন ইরানের আমদানিকারকেরা। দেশটির ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এরই মধ্যে ইরানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে ইরান। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। ছবি: রয়টার্সমার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে ইরান। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে। ছবি: রয়টার্স
অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এসেছে ইরানের অটোমোবাইল শিল্পেও। বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানির ফক্সওয়াগন ও ফ্রান্সের রেঁনো দেশটি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, ইরানের তেল রপ্তানির সব পথ বন্ধ করে দিতে চায় তারা। ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্সের তেল শোধনাগার আছে এবং তাতে এত দিন ইরানের অপরিশোধিত তেলই ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে এখন আর রিলায়েন্স ইরান থেকে তেল নিচ্ছে না। ওদিকে তেল-গ্যাস সম্পর্কিত অবকাঠামো তৈরি করতে জেনারেল ইলেকট্রিক দেশটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, সেটিও বাতিলের পথে। আর উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, চাইলেও ইরান পাবে না কোনো বিমান।

বিজনেস ইনসাইডার বলছে, সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে বড় ঝামেলায় পড়বে ইরানের তরুণেরা। এখনই দেশটিতে বেকারত্বের হার প্রায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ, মোট ৩০ লাখ ইরানি বেকার। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশি-বিদেশি কর্মক্ষেত্র আরও সংকুচিত হবে। ফলে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। গত সেপ্টেম্বরে ইরানের পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার দেশটির স্থিতাবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কারণ, বেকারত্ব নিয়ে তরুণদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বেকারত্বের হার ২৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এরই মধ্যে আরব অঞ্চলের জনগণকে মার্কিনবিরোধী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তেহরানে দেখা যাচ্ছে একটি মার্কিনবিরোধী ম্যুরাল। ছবি: রয়টার্সইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এরই মধ্যে আরব অঞ্চলের জনগণকে মার্কিনবিরোধী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তেহরানে দেখা যাচ্ছে একটি মার্কিনবিরোধী ম্যুরাল। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্র কেন মারমুখী? 
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কখনোই মধুর ছিল না। বরাবরই সাপে-নেউলে সম্পর্ক দুই দেশের। এবার তা জটিল রূপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরানকে সর্বোচ্চ চাপে রাখতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কর্মসূচি থেকে ইরানকে সরিয়ে আনতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। গাজায় হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে হাসান রুহানির সরকার। এটি একেবারেই পছন্দ নয় সৌদি আরব তথা যুক্তরাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরানের কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসে মদদ দিচ্ছে এবং বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরিতে অর্থায়ন করছে। এগুলো বন্ধের জন্যও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত আরব বিশ্বের রাজনীতিতে একাধিপত্য বিস্তার করতেই এত অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। সৌদি আরবের মাধ্যমে আরব বিশ্বে ছড়ি ঘোরানোর জন্যই ইরানকে দুর্বল করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের পাশে দাঁড়াবে ইউরোপ?
ইরানের জন্য আশার কথা হচ্ছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার চিন্তা করছে ইউরোপ। ইকোনমিস্ট বলছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী ইরান থেকে কোনো পরিমাণ অর্থ বিশ্ববাজারে ঢুকতে বা বের হতে পারছে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের সঙ্গে বৈধ বাণিজ্য অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা রক্ষায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ইইউ বলছে, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখার জন্য স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) নামের একটি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে এসপিভি একটি ব্যাংকের মতো ভূমিকা রাখবে। ইরানের সঙ্গে সরাসরি আর্থিক লেনদেন এড়িয়ে করা হবে পরোক্ষ লেনদেন। সে ক্ষেত্রে যখন কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইরানের লেনদেনের প্রয়োজন হবে, তখন তা হবে এসপিভির মাধ্যমে। এটি একদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ পরিশোধ করবে, অন্যদিকে ইরানের পাওনা অর্থও গ্রহণ করবে। ফলে অর্থ লেনদেনের জন্য মার্কিন ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রয়োজনই হবে না। আবার কোনো ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, থাকবে তা পূরণের ব্যবস্থাও।
সমস্যা হলো—প্রায় ছয় মাস আগে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেও এসপিভি এখনো পরিকল্পনার পর্যায়েই আছে। মার্কিন হুমকির সামনে সাহস করে কোনো দেশই এসপিভি চালু করার ঝুঁকি নিচ্ছে না। সুতরাং এর বাস্তবায়ন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ভয়ংকর বিপদে পড়তে যাচ্ছেন ইরানের আমদানিকারকেরা। দেশটির ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়। ছবি: এএফপিমার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ভয়ংকর বিপদে পড়তে যাচ্ছেন ইরানের আমদানিকারকেরা। দেশটির ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়। ছবি: এএফপি
টিকে থাকতে পারবে ইরান? 
এমন বহুমাত্রিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে কত দিন ইরান টিকে থাকতে পারবে—সেটি একটি বড় প্রশ্ন। নিন্দুকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক চাপে ফেলে ইরানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য। এভাবেই ইরানকে কোণঠাসা করে নতজানু দেশে পরিণত করতে চায় মার্কিন সরকার।

ওদিকে ইরানও চুপ নেই। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এরই মধ্যে আরব অঞ্চলের জনগণকে মার্কিনবিরোধী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র সফল হতে পারবে না। কারণ তারা ধীরে ধীরে পশ্চাদপসরণ করছে।’
ইউরোপ বাদে ইরানের বড় সহায় কারা? উত্তর: চীন ও রাশিয়া। নিউজউইকের হিসাব অনুযায়ী, ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হলো চীন। রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে রাশিয়াও দেশটির প্রতি সহানুভূতিশীল। বিশ্লেষকেরদের মতে, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে এখন সি চিন পিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া ইরানের সত্যিই কোনো গতি নেই।

এবার আলোকচিত্রীকে তুলে নিল চীনা পুলিশ

এবার আলোকচিত্রীকে তুলে নিল চীনা পুলিশ

চীনের পুরস্কারজয়ী আলোকচিত্রী লু গুয়াংয়ের খোঁজ নেই। অজ্ঞাত কারণে সপ্তাহ তিনেক আগে চীনের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। লু গুয়াংয়ের স্ত্রী জু শিয়াওলি স্বামীকে ফেরত চেয়েছেন।
এর আগে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান ‘এক্স-ম্যান’ ও ‘আয়রন ম্যান’খ্যাত অভিনেত্রী ফান বিংবিং ও ইন্টারপোলের প্রধান মেং হোংউআই। এই দুজন চীনা নাগরিকের পরে খোঁজ মেলে। পুলিশ জানায়, এঁরা তাদের হেফাজতে আছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের থাকেন লু গুয়াং। অক্টোবরে চীনে একটি সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান। এরপরই তিনি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে গিয়েছিলেন।

আলোকচিত্র বিষয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৩ অক্টোবর চীনের লু জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে যান। সেখান থেকে চেন নামে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তার সিচুয়ান প্রদেশে যাওয়ার কথা ছিল। সিচুয়ানে একটি দাতব্য অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল লুর। কিন্তু চেন সিচুয়ানে গিয়ে লুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন এবং নিউইয়র্কে জু শিলাওলির সঙ্গে যোগাযোগ করে লু সম্পর্কে জানতে চান।
জু শিয়াওলি বলেন, ৩ নভেম্বর জিনজিয়াংয়ে গিয়েছিলেন লু গুয়াং। এরপর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। ৫ নভেম্বর এক বন্ধুর সঙ্গে লুর দেখা করার কথা ছিল। চীন সরকার ক্ষুব্ধ হতে পারে, এমন কোনো কাজ তাঁর স্বামী করেছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও জানান জু।
জু জানান, তিনি নিজেও লু কোথায় আছেন, জানেন না। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর তিনি স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
যে ব্যক্তি লুকে চীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জু তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তিনি জানতে পারেন, লুকে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন। পরে জিনজিয়াং প্রদেশে লুর শহরের এক কর্মকর্তা তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ‍জুকে নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে আর কোনো তথ্য তিনি দেননি বলেও জানান লুর স্ত্রী জু।
টুইটারে এক পোস্টে জু লেখেন, ‘লু ২০ দিনের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ। তাঁর পরিবারের সবচেয়ে কাছের সদস্য হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য আমাকে জানানো হয়নি। আমি বারবার জিনজিয়াং প্রদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ের ২০ বছর পূর্ণ হবে। আমরা একসঙ্গে তা উদযাপন করতে চাই। এখন আমি শুধু তাঁর নিরাপদে বাড়ি ফেরার আশা করতে পারি।’
আলোকচিত্রী লু গুয়াংয়ের নাই হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিনজিয়াংয়ের আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তবে সরকার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। 

বেইজিংয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেন, তিনি এ ব্যাপারটি (লু গুয়াং) সম্পর্কে অবহিত নন।

প্রান্তিক সমাজের প্রতিদিনের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে লু গুয়াংয়ের আলোকচিত্রে। বিশেষ করে কয়লাখনির শ্রমিক, মাদকাসক্ত ও এইচআইভি রোগীদের কথাগুলো ছবিতে তুলে ধরেছেন এই আলোকচিত্রী। তিনবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার বিজয়ী লু চীনের পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে কাজ করেন।

তাইওয়ানের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি


তাইওয়ানের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি
তাইওয়ানে স্বাধীনতাকামী ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) দেশটির মেয়র ও স্থানীয় নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলটির পরাজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে চীন। এই ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা নয়, ‘এক চীন’ নীতির পক্ষে তাইওয়ানের ভোটাররা মত প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেছে চীন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় নির্বাচনে দলের বড় ধরনের এই পরাজয়ের দায়ভার নিয়ে গতকাল ডিপিপির চেয়ারওমেন হিসেবে পদত্যাগ করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। তবে এটি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন হওয়ায় তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল রয়েছেন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে তাঁকে পুনর্নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

তাইওয়ানের মাত্র ছয়টি শহর ও কাউন্টিতে ডিপিপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অন্যদিকে, কমপক্ষে ১৫টিতে জয় পেয়েছে চীনপন্থী ন্যাশনালিস্ট কুওমিনতাং পার্টি (কেএমটি)। ডিপিপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কোজিংয়ে হেরেছে দলটি।
নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাইওয়ানবিষয়ক চীনের নীতি প্রণয়ন কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই ফলাফলে তাইওয়ানের জনগণের জোরালো প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ চায়, দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন সম্পর্কের মাধ্যমে কল্যাণপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। তারা দ্বীপের অর্থনীতির উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ চায়।
২০১৬ সালে সাই ক্ষমতা নেওয়ার পর তাইওয়ানের ওপর চীন নানাভাবে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। চীন থেকে বেরিয়ে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা চান সাই। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ দাবি করা চীনের জন্য এটা সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রতি চীন দ্বীপজুড়ে সামরিক মহড়া শুরু করলে এবং তাইওয়ানের কূটনৈতিক মিত্রদের একে একে কেড়ে নিলে তাইওয়ানজুড়ে উত্তেজনা শুরু হয়।

এই নির্বাচনে সাই ও তাঁর সরকার অভিযোগ করেছে, তাদের দলকে পরাজিত করার জন্য চীন ‘রাজনৈতিক তর্জন–গর্জন’ ও ‘ভুয়া খবর’–এর মাধ্যমে ভোটারদের দোদুল্যমান করার চেষ্টা করেছে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ডিপিপির সেক্রেটারি জেনারেল হুয়াং ইয়ো-ফু গতকাল অভিযোগ করেছেন, বারবার ‘ভুয়া খবর’ ছড়িয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে কাজ করেছে চীন। তিনি আরও বলেন, এ থেকে গভীর শিক্ষা হয়েছে। ভুয়া খবর অনেক মানুষের চিন্তাভাবনাকে এলোমেলো করে দেয়। এ ধরনের খবরের কারণে লোকজন স্পষ্ট কোনো তথ্য পান না। শুধু তাইওয়ানে নয়, বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে তাঁদের দল উপায় খুঁজে পাবে বলে মনে করেন হুয়াং ইয়ো-ফু।

তবে নির্বাচনী নাটক এখনো শেষ হয়নি। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে বিরোধী দল কুওমিনতাংয়ের মেয়র প্রার্থী তাঁর পরাজয়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিং সোও-চাং আজ রোববার বলেছেন, তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কো ওয়েন-জে খুব অল্প ব্যবধানে জিতেছেন। সেখানে ডিপিপি প্রার্থী তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় টোকিও অলিম্পিকে ‘চায়নিজ তাইপে’–র পরিবর্তে তাইওয়ান নামে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে গণভোট হয়। ১৯৮১ সালে এক সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘চায়নিজ তাইপে’ নামের ব্যাপারে সম্মতি হয়। তবে এই গণভোটে খুব বেশিসংখ্যক ভোটার সাড়া দেননি। বেশির ভাগ নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এটিকেও বিজয় হিসেবে দেখছে চীন।

এ ব্যাপারে চীনের তাইয়ানবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, এতেই বোঝা যায়, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘তাইওয়ানিজ অ্যাথলেট’ নাম বসানো হচ্ছিল। ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ চাওয়ার উদ্যোগ ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

চীনে কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ২২

চীনে কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ২২

চীনের উত্তরাঞ্চলীয় হেবেই প্রদেশে একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২২ জন নিহত হয়েছে। আহত ২২ জন। গতকাল মঙ্গলবার হেবেই প্রদেশের কাছে ঝাংজিয়াকু শহরে শেংগুয়া কেমিক্যাল কোম্পানিতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হেবেই প্রদেশে ২০২২ সালে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হওয়ার।
এই নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল চীনে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, বিস্ফোরণে কারখানার আশপাশে ৩৮টি ট্রাক ও ১২টি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে বিস্ফোরণটি রাস্তায় হয়েছে, না কারখানার অংশে হয়েছে, তা জানায়নি ওই গণমাধ্যম।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, কারখানাটির প্রবেশমুখে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। একটি বাহনে করে বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়ার সময় এটি বিস্ফোরিত হয়।
ঘটনার পর থেকে উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। এ দুর্ঘটনা ও হতাহত ব্যক্তিদের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আহত লোকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
চীনে প্রায়ই রাসায়নিক কারখানা বা সংলগ্ন এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চলতি মাসেই উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ জিলিনে যন্ত্রপাতি তৈরির একটি কারখানায় বিস্ফোরণে দুজন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়। মধ্যরাতের দিকে ওই বিস্ফোরণে অন্তত ৪১টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত জুলাই মাসে দক্ষিণ–পশ্চিমের সিচুয়ান প্রদেশের একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে ১৯ জন নিহত ও ১২ জন আহত হন। ২০১৫ সালে তিয়ানজিং প্রদেশে একই ধরনের এক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৬৫ জন।

৯ হাজার বছরের পুরোনো মুখোশ!

৯ হাজার বছরের পুরোনো মুখোশ!

গোলাপি আর হলুদ বেলেপাথর দিয়ে তৈরি নিখুঁত একটি মুখোশ। এর কপোলের হাড়ের স্পষ্ট গঠন আর খাড়া নাকের আকৃতি দেখে মনে হবে যে সদ্য তৈরি করা হয়েছে। এমনই একটি মুখোশ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের অ্যান্টিকস কর্তৃপক্ষ (আইএএ)। মুখোশটির বয়স নয় হাজার বছর! বিশ্বে এত বছরের পুরোনো এমন মুখোশ রয়েছে মাত্র ১৫টি। নব্যপ্রস্তর যুগের মুখোশ এগুলো।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে হেবরনে এই মুখোশের সন্ধান পাওয়া যায়। অনলাইন গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, চলতি বছরের প্রথম দিকে চোরদের কাছ থেকে মুখোশটি উদ্ধার করা হয়। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই স্পষ্ট করে বলেনি তারা।

বিশ্বে এত বছরের পুরোনো এমন মুখোশ রয়েছে মাত্র ১৫টি। ছবি: এএফপিবিশ্বে এত বছরের পুরোনো এমন মুখোশ রয়েছে মাত্র ১৫টি। ছবি: এএফপি
গতকাল বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আইএএর প্রত্নতত্ত্ববিদ রনিত লুপু বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মুখোশটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। আপনারা এর কপোলের হাড় দেখতে পাবেন। এর নিখুঁত নাক স্পষ্ট।’ তিনি ধারণা করেন, মুখোশটি ধর্মীয় উপাসনার কাজে ব্যবহার করা হতো। মুখোশটির শেষ প্রান্তে গর্ত দেখে ধারণা করা হয়, এটি প্রদর্শনের জন্য রাখা ছিল।

আইএএ এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বে এমন মাত্র ১৫টি মুখোশ রয়েছে, যার মধ্যে ১৩টিই রয়েছে ব্যক্তিগত সংগ্রহে। এতে এ বিষয়ে গবেষণা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম-৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সাকার ভাই

চট্টগ্রাম-৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সাকার ভাই

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরী। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী মো. কামাল হোসেন এই মনোনয়নপত্র জমা দেন। গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ফটিকছড়ি আসন থেকেও মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

ওই দিন চট্টগ্রাম-৭ আসনে বিএনপির মনোনীত আরও তিনজন মনোনয়ন ফরম জমা দেন। তাঁরা হলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত, উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক শওকত আলী নূর ও অন্য অংশের সভাপতি কুতুব উদ্দিন বাহার। কুতুব বাহার কারাবন্দী।

গিয়াসউদ্দিনের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিন কাদের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি দেশের যেকোনো জায়গা থেকে নির্বাচন করতে পারেন। যেহেতু তিনি কারাবন্দী, তাই মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হয়েছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আমি সহযোগিতা করেছি। তিনি বিএনপি থেকে, নাকি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি, নাকি রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচন করবেন, তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দেবে।

১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২২ নভেম্বর ফটিকছড়ি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা মামলায় আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জোটের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব

জোটের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব

২০–দলীয় জোটের পক্ষে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে জামায়াতের পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম রব্বানী খান জুবায়ের।

গোলাম রব্বানী খান বলেন, বিএনপির মধ্যে দীর্ঘদিনের কোন্দল ও সংঘাতের কারণে বারবার পাবনা-৪ আসনটি তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তাঁদের দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামায়াত এবার এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে। তিনি বলেন, এ আসনের জন্য তাঁদের প্রার্থী দীর্ঘদিন থেকে মাঠপর্যায়ে ও মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোটের জন্য কাজ করেছেন। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। সারা দেশে ৬৪ আসনে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এ কারণে পাবনা-৪ আসনে তাঁরা কোনো ছাড় দেবেন না। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তালেব মণ্ডল নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা মাঠ ছাড়তে প্রস্তুত নন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের নাসির উদ্দিন পরাজিত হন। এরপর থেকে নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ছিল না। ২০০১ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে। সেবার নির্বাচনে জোটের প্রার্থী ছিলেন সিরাজুল ইসলাম সরদার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফের কাছে পরাজিত হন। এরপর এই আসন থেকে বিএনপিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সম্প্রতি জামায়াতের আবু তালেব মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযাযী তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ জন্য তাঁদের নির্বাচনী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
আবু তালেব মণ্ডলের এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে না। জোটের সিদ্ধান্ত তাদের মানতে হবে।
ঈশ্বরদীতে বিএনপির কোন্দল সম্পর্কে হাবিবুর রহমান বলেন, বড় দলে এমন কিছু থাকতেই পারে। তবে তিনি ঈশ্বরদীতে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করেছেন। দল এখন ঐক্যবদ্ধ।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের মচ্ছব

আচরণবিধি লঙ্ঘনের মচ্ছব

সিলেটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে অধিকাংশ প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় থাকা মন্ত্রী, সাংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী বিধি লঙ্ঘন করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুটি দলকে বেশ কয়েকবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাঙ্গণে টহল দিতে দেখা গেছে। এরপরও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নিজেদের প্রতীকের সমর্থনে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো ধরনের শোডাউন কিংবা মিছিল করা যাবে না বলেও নীতিমালা রয়েছে। বিধি না মানলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাতজন ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গতকাল প্রার্থীদের অনেকে তারও বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি নিয়ে তিনি বিপুল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। ১টা ৪০ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। শিক্ষামন্ত্রী তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি নিয়ে আসেননি। তবে এ সময় বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র আবদুস শুকুর তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আসেন। শিক্ষামন্ত্রীর সমর্থনেও তখন নৌকা প্রতীকে স্লোগান হয়।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন তাঁর বড় ভাই অর্থমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে বেলা ২টা ১৮ মিনিটে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে কয়েক শ কর্মী-সমর্থক ছিলেন এবং তাঁরা ‘নৌকা, নৌকা’ বলে স্লোগান দেন। স্লোগান দিয়ে দলটির অন্তত অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। অর্থমন্ত্রী পুলিশ প্রটোকল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন এবং যাওয়ার সময়ও একইভাবে ফেরত যান। সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল বেলা সাড়ে চারটার দিকে এ কে আবদুল মোমেনের সমর্থনে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সদের অ্যাসোসিয়েশন বৈঠক করে। নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় মোমেনের বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ওই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে নার্সরা সভায় যোগ দেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের জাতীয় পার্টি-সমর্থিত সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী বেলা ২টা ৪০ মিনিটে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জাতীয় পার্টির বিপুল কর্মী-সমর্থক ছিলেন। সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী বেলা তিনটায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এ সময় তাঁর ও তাঁর কর্মীদের হাতে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেখা যায়। তাঁরা সে প্রতীক প্রদর্শন করে তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও ধানের শীষের সমর্থনে স্লোগানও দেয়।
বেলা সাড়ে চারটায় সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এ সময় তাঁর সমর্থকেরা মুহুর্মুহু নৌকার স্লোগান দেন। দিনভর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় এ রকম আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে অন্তত ১৫ জনকে দেখা গেছে।
পুলিশ প্রটোকলের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি পুলিশ প্রটোকল হিসেবে আসিনি। আমি বলেছিলাম আমার কোনো প্রটোকলের প্রয়োজন নেই। তারা (পুলিশ) বলেছে প্রটোকল নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।’
জানতে চাইলে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো স্লোগান বা শোডাউন হয় নাই। যেটা হয়েছে, একজন প্রার্থী বোধ হয় চলে যাচ্ছিল, তখন আরও কয়েকজন বিরোধীরা হইচই করেছে। শুধু একবার এমন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।’
প্রার্থীদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের সরকারি গাড়ি থাকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আসা প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটা আমার নলেজে নাই। আর গাড়ি নিয়ে আসে নাই। গাড়ি আমরা রিকুইজিশন করছি। আপনারা যেসব দেখেছেন, ছবি তুলেছেন, সেসব আমরা রিকুইজিশন করে এখানে রেখেছি। নির্বাচনী কাজে সব গাড়ি আমাদের রিকুইজিশন করা। এসব গাড়িই আপনার দেখেছেন, ছবি তুলেছেন।’

দুই মন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস ও ইনাম আহমদের শঙ্কা

দুই মন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস ও ইনাম আহমদের শঙ্কা

'এবার আমাদের কম্পিটিশন অনেক ইজি হবে। নৌকা অনায়াসেই জিতবে। দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ তার প্রতিদান দেবে।’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতোই এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বললেন, ‘দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে।’
দুই মন্ত্রীর মুখে এ রকম আশাবাদ থাকলেও শঙ্কা দেখা গেছে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। আমরা চাচ্ছি নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হোক। অনেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে কারারুদ্ধ রয়েছেন এবং গায়েবি মামলার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন অবরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।’
গতকাল বেলা আড়াইটার সময় সিলেট রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল হকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর নেতারা সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সিইসির পদত্যাগের জন্য ড. কামাল হোসেন যে দাবি তুলেছেন, সেটি একটি অহেতুক দাবি। এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এটি একটি ননসেন্স দাবি।’ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হোয়াট ইজ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? এটি তাঁদের এক্সকিউজ (অজুহাত)। তাঁদের উচিত নির্বাচনে কীভাবে ভালো কম্পিটিশন করা যায়, সেটার চেষ্টা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টে আওয়ামী লীগের প্রাক্তন এক নেতা রয়েছেন। তাঁর হাতেখড়ি হয়েছে আওয়ামী লীগেই। ঐক্যফ্রন্টের কারণে অবশ্যই কিছুটা সুবিধা পাবে বিএনপি। কিন্তু জিতবে আওয়ামী লীগ।’
এর আগে তিনি তাঁর আসন সিলেট-১ (মহানগর-সদর) থেকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া ছোট ভাই এ কে আবদুল মোমেনের মনোনয়নপত্র দাখিল করার আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘অনেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও মনোনয়নের পর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ এবারের নির্বাচন আগেরগুলো থেকে ব্যতিক্রমী উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে এগুলো প্রয়োজন রয়েছে।পুলিশ প্রটোকল নিয়ে মনোনয়ন জমাদানের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ প্রটোকল হিসেবে আসেনি। আমি বলেছিলাম আমার কোনো প্রটোকলের প্রয়োজন নেই। তারা বলেছে, প্রটোকল নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।’
নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। দলগুলো আশা ও বিশ্বাস নিয়ে অংশ নিচ্ছে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র আইনের পুনরায় প্রতিষ্ঠা হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নিজের অনুজপ্রতিম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে খুব ভালো জানি। তবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে গণরায় প্রতিষ্ঠা হোক, সেটিই সবাই চায়। মর্যাদাপূর্ণ আসনটিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যিনি মিশতে পারেন, তাঁকেই জনগণ বেছে নেবেন।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন সুন্দর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের।
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারেবন না, উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি যাতে ফিরতে পারেন, আইনের শাসনের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন, সেটার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তাঁর (খালেদা জিয়া) অনুপস্থিতিতে বিএনপি আরও শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এবার স্বতন্ত্র হলেন দুই সাংসদ

এবার স্বতন্ত্র হলেন দুই সাংসদ

বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির (জাপা)। তাঁকে বাদ দিয়ে দলটি আরেকজনকে প্রার্থী করেছে। আবার সংরক্ষিত নারী আসনের একজন সাংসদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এই দুই সাংসদই গতকাল বুধবার হবিগঞ্জ-১ আসনের জন্য স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল নিয়ে হবিগঞ্জ-১ আসন। বর্তমান সাংসদ জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মুনিম চৌধুরী (বাবু)। তাঁকে বাদ নিয়ে এবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিককে মনোনয়ন দিয়েছে জাপা। এর প্রতিবাদে বর্তমান সাংসদ আবদুল মুনিম চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
 আবদুল মুনিম চৌধুরী বাবুর পক্ষে গতকাল সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদ বিন হাসানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এবং জনগণের চাপে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
একইভাবে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীও। তিনি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের (হবিগঞ্জ ও সিলেট) সাংসদ। তিনিও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ আসনে দলটি মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে প্রয়াত সাংসদ দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজীকে।
গতকাল বুধবার বিকেলে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর পক্ষে একদল নেতা-কর্মী হবিগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের কাছে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তা ছাড়া এ আসনে এখনো মহাজোটের প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়নি। কাজেই এখনো তাঁর  মনোনয়ন চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন। নইলে দল থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা তিনি মেনে নেবেন।
চার আসনে মোট ৩২ জন: হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী ও জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমানও গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে মোট আটজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া (গণফোরাম), সাবেক সাংসদ ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শেখ মো. সুজাত মিয়া (বিএনপি), যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুল হান্নান (স্বতন্ত্র) ও আবু হানিফ আহমদ হোসেইন (ইসলামী আন্দোলন)। 
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ) আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আটজন। তাঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সাখাওয়াত হাসান ও  ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আবদুর রব ইউসূফী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আবদুল বাসিত আজাদ, ইসলামী আন্দোলনের এ জে মাসউদ হাসান ও স্বতন্ত্র হিসেবে সাংবাদিক আফছার আহমেদ রূপক।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট আটজন। তাঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাহির, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি আতিকুর রহমান, গণফোরাম থেকে চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান, ইসলামী আন্দোলনের মুহিব উদ্দিন আহমেদ সোহেল, এনপিপির আবদুল কাদির ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নুরুল হক।
হবিগঞ্জ-৪ ( চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আইনজীবী মো. মাহবুব আলী, জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের ও ইসলামী আন্দোলনের শেখ সামছুল আলম।

যে ‘রোগ’ সাকিবকে ভাবাচ্ছে

যে ‘রোগ’ সাকিবকে ভাবাচ্ছে

ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ভালো খবরে অস্বস্তি হয়ে বিঁধছে ওপেনিং জুটির ধারাবাহিক ব্যর্থতা। কাল সাদমান ইসলামের অভিষেক হলে ১১ টেস্টে বাংলাদেশের নয়টি ওপেনিং জুটি দেখা যাবে।
বাংলাদেশ দলের যিনিই সংবাদমাধ্যমের সামনে আসছেন, গত কিছু দিন তাঁকেই শুনতে হচ্ছে প্রশ্নটা, ‘ওপেনিং জুটি নিয়ে কী ভাবছেন?' কিংবা ‘ওপেনিং জুটি নিয়ে কতটা উদ্বিগ্ন?’ বাংলাদেশ ভালো কিংবা খারাপ যে ফলই করুক, ওপেনিং জুটির কোনো উন্নতি নেই। প্রশ্ন তো উঠবেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জেতার দিনেও সাকিব আল হাসানকে যেমন বলতে হলো ওপেনিং জুটি নিয়ে, ‘প্রতিদিন ১০ রানে ২ উইকেট থাকা খুবই দুঃখজনক বিষয়। সব ম্যাচে তিন-চার-পাঁচ-ছয়ের ব্যাটসম্যান গিয়েই রান করবে, সে নিশ্চয়তা নেই। যদি এমন না হয় তাহলে একটু স্বস্তির জায়গা পাওয়া যায়। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।’

সাকিব আশা করেছিলেন তামিম ইকবাল ফিরলে ওপেনিং জুটি নিয়ে দুশ্চিন্তা কমবে। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খানও দুদিন আগে সাকিবের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছিলেন, ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তামিম এখনো চোট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’ চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় তামিম ফিরছেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও। চোটে পড়ে নেই ইমরুল কায়েসও। মিরপুর টেস্টে সাদমান ইসলামের টেস্ট অভিষেক হওয়ার তাই জোর সম্ভাবনা। সাদমান যদি সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন, সবশেষ তিন টেস্টে তিনবার ওপেনিং জুটিতে বদল আনতে হবে বাংলাদেশ। সবশেষ ১০ টেস্টে দেখা গেছে আটটি ওপেনিং জুটি। সাদমানের অভিষেক হলে সেটি পৌঁছাবে নয়ে। গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই তিন টেস্টে তিনবার ওপেনিং জুটি বদলেছে। এর মধ্যে একটি অবশ্য ক্রিকেটীয় আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে পচেফস্ট্রুম টেস্টে তামিমকে নামতে হয় পাঁচে। চোটে পড়ার আগে গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর পর্যন্ত তামিমই ছিলেন ওপেনিং জুটিতে নিয়মিত ব্যাটসম্যান। বদলেছেন শুধু অন্যপ্রান্তের সঙ্গী। তামিমের সঙ্গে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাসই এসেছেন ঘুরেফিরে। কেউ প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি। তামিম চোটে পড়ায় সুযোগ ছিল দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে নেওয়ার। সেটিতেও তাঁরা ব্যর্থ।
ওপেনিং জুটি ঘনঘন বদলের অর্থই বাংলাদেশের নড়বড়ে শুরু। গত ৬ টেস্টে মাত্র একবারই বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ৫০ পেরিয়েছে, সেটিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। বাকি ১১ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০ রান এসেছে উদ্বোধনী জুটি থেকে। ওপেনাররা ভালো শুরু না এনে দিতে পারলে স্বাভাবিকভাবে চাপ পড়ে তিন কিংবা চার নম্বর পজিশনে নামা ব্যাটসম্যানদের। দ্রুত উন্মুক্ত হয়ে যায় মিডল অর্ডার। দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দিতে গলদঘর্ম অবস্থা হয় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। শুরুটা ভালো না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ড্রেসিংরুমে, অনেক সময় আত্মবিশ্বাসও টলে যায় খেলোয়াড়দের।
বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির ধারাবাহিক ব্যর্থতায় যাঁকে বেশির ভাগ সময় ইনিংসের মেরামতের কাজটা করতে হচ্ছে তিনি মুমিনুল হক। এ বছর যে চারটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুটিই বিপর্যয় সামলে। আরও একটি ওপেনিং জুটি দেখার সম্ভাবনা যখন জোরালো, নিয়মিত তিনে নামা মুমিনুল সেটি অবশ্য দেখছেন ইতিবাচকভাবেই, ‘যদি শুরুতে বিপর্যয় হয় আমার চাপ হবে কি না? আপনি ক্রিকেট খেলবেন চাপ তো আসবেই। চাপটা সামলানোও জানতে হবে। সব সময়ই চেষ্টা করি, চাপ কাটিয়ে উঠতে। আপনারা যেভাবে চিন্তা করছেন ওটা অনেক জটিল। এমন জটিল চিন্তা না করার চেষ্টা করি।’ তবে তিনি আশাবাদী, সাদমান সুযোগ পেলে তিনি হতাশ করবেন না।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের অভিযানে নামার আগে সাকিবকে বেশ ভাবাচ্ছে ওপেনিং জুটির রোগটা। ওপেনিং জুটি কেন বারবার বদলাতে হচ্ছে, আজ সেটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক, ‘শুরুটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সংস্করণেই শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। ওপেনাররা বলটা যেন পুরোনো করে দিয়ে আসতে পারে বা একটা ভালো জুটি গড়ে দিয়ে আসতে পারে। তাহলে খেলাটা অনেক সহজ হয়। এই জায়গায় আমরা বেশি সফল হয়নি। বোলিংয়ে হয়েছি, ব্যাটিংয়ে হইনি। এ কারণে অনেকগুলো ওপেনিং জুটি দেখা গেছে। আমাদের মনে হয়েছে, বারবার বদল এলে একটা না সময় এসে ওরকম কাউকে আমরা পাব। ওই ভরসার জায়গাটা তৈরি করা খুব জরুরি। আশা করব আমরা ওরকম কাউকে পেয়ে যা যাতে আমাদের ভিতটা গড়ে উঠবে। ওপেনিংয়ে একটা ভালো জুটি হলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়, দলের ভেতর একটা স্বস্তি তৈরি হয়। খুব ভালো একটা অবস্থানে আসতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওপেনিং জুটি। মুমিনুল এ বছর চারটা সেঞ্চুরি করেছে, খুবই ভালো। আমাদের ওপেনারদের কাছ থেকে যদি এ রকম এক-দুইটা সেঞ্চুরি বা বড় রান আসে বা জুটিটা যদি ৫০ পেরিয়ে যায় তাহলেও আমাদের জন্য বড় স্বস্তির।’
কথায় বলে মাছের পচন মাথা থেকে, অনেক সময় একটা ইনিংসের ‘পচন’ও হয় ওপেনিং জুটি থেকে। মিডল কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে বাংলাদেশ। সাকিব যেট বললেন, প্রতিদিন মিডল, লোয়ার মিডল অর্ডার বাঁচাবে না। ওপেনিং জুটির অসুখটা সারানো তাই অনিবার্য হয়ে পড়েছে।

মুশফিক খেলবেন কিন্তু...

মুশফিক খেলবেন কিন্তু...

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের এক দিন আগে হঠাৎ ডান হাতের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ব্যথা কিছুটা কমায় আজ তিনি অনুশীলন করেছেন। কাল তাঁর খেলা নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ।
ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যান্ডেজটা আছে। ব্যথা কিছুটা কমায় সকালে ব্যাট হাতে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ড্রেসিংরুমের সামনে খানিকটা সময় ঝালিয়ে নিয়ে গেছেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে। সকালে মুশফিকের ঘণ্টা খানেকের এই অনুশীলন স্বস্তি দিচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
এখনো পর্যন্ত দলের ভাবনাটা হচ্ছে, মুশফিক খেলবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন, নাকি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে? দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘এখনো পর্যন্ত আমি যতটুকু জানি যে মুশফিক ভাই খেলবেন এবং দুটিই করবেন।’ দলের ম্যানেজার আকরাম খানও বলেছেন একই কথা, ‘ব্যথা অনেকটা কমেছে। কাল সকালেও দেখা হবে ব্যথা কতটা কমে। সেটির ওপর নির্ভর করবে মুশফিক দুটিই করবে কি না।’

একই সঙ্গে দুটি ‘সার্ভিস’ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে বলেই সাকিব জানিয়েছেন, বিকল্প হিসেবে জরুরিভাবে ডেকে আনা হচ্ছে বগুড়ায় বিসিএল খেলতে যাওয়া লিটন দাসকে, ‘বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে লিটনকে। যদি (মুশফিকের) ব্যথাটা বাড়ে, ফোলা থাকে, কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে আমাদের বিকল্প পরিকল্পনাটাও যেন থাকে। এ কারণেই লিটনকে আনা।’
শেষ পর্যন্ত মুশফিক যদি কিপিং না-ই করতে পারেন, তবে লিটনকে কোথায় খেলানো হতে পারে, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন সাকিব, ‘আমাদের ওপেনিং কারা করবে, এটা মোটামুটি জানি। যদি মুশফিক ভাই না কিপিং করতে পারে, সেটি ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম, তাহলে লিটন কিপিং করবে। আর কিপিং করে ওপেন করাটা তাঁর জন্য খুবই কঠিন হবে।’

লিটন যদি খেলেন এবং ওপেনিংয়ে না নামেন, একাদশের বাইরে চলে যেতে পারেন মোহাম্মদ মিঠুন।

সিরাজগঞ্জে একই সড়কে ঝরল ৬ প্রাণ

সিরাজগঞ্জে একই সড়কে ঝরল ৬ প্রাণ

সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিরা সবাই বাসের যাত্রী ছিল। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে ওই সড়কে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়।
সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক আবদুল হামিদ দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জানান, সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে কড্ডার মোড় এলাকায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। থেমে থাকা যাত্রীবাহী একটি বাসকে আরেকটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে যাত্রীবাহী বাসটি সামনে থাকা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে অনেকেই আহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে সিরাজগঞ্জের সায়েদাবাদ এলাকায় দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, আজ ১০ জনসহ ৬৪৪ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৫।