Tuesday, November 27, 2018

জল গড়াবে কত দূর?

জলের গান পার করল ১২ বছর। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে যে দলটার জন্ম, তা ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মঞ্চ মাতিয়েছে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে রাহুল আনন্দের বাসায় বসে ১২ বছরের গল্প বলেছেন দলের নতুন-পুরোনো সদস্যরা।
রাহুল আনন্দের হাতের বাদ্যযন্ত্রের নাম মমতা। জানতে চাইলাম, এই নামের কারণ কী? ‘আমার মা যখন অসুস্থ ছিলেন এবং মারা গেলেন, তখন এটা বানাচ্ছিলাম। এই কারণে আমার মায়ের নামে নাম রেখেছি।’ —বললেন রাহুল। জলের গানের কান্ডারি তিনি। এ রকম নানা নামের বাদ্যযন্ত্র আর ঘটনার সঙ্গী হয়ে ১২ বছর পার করল দলটি। জানতে চাই, এই ১২ বছরে আপনাদের প্রাপ্তি কী?
সামনে বসেছেন রাহুল। সঙ্গে আরও ছয় সদস্য—রানা সারোয়ার, এ বি এস জেম, ঐশ্বর্য মল্লিক, দীপ, মাসুম ও গোপী। শব্দ প্রকৌশলী শুভ অনুপস্থিত। রাহুল উপস্থিত সবার দিকে তাকান। প্রাপ্তি বলার আগেই বলে নেন, ‘শুধু আমাকে প্রশ্ন করলে খুব অস্বস্তিতে পড়ি। ওদেরও নিশ্চয় বলার আছে। প্লিজ ওদেরও প্রশ্ন করবেন।’
সম্মতি পেয়ে বলা শুরু করেন রাহুল, ‘প্রাপ্তি বলা কঠিন। আমাদের প্রাপ্তি তো প্রচুর। সবাই বলে যেটা, সেটাই বলি, আমরা মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এই ভালোবাসা সবার মতো নয়। যেমন ধরেন, দুই আড়াই বছরের বাচ্চা যেমন আমাদের গান পছন্দ করে, তেমনি বড়রাও করেন।’ পাশে বসা রানা মনে করিয়ে দিলেন এই মাসের শুরুতে কক্সবাজার থেকে বিমানে ঢাকায় ফেরার ঘটনা। সেটা মনে করে একচোট হেসে নিল পুরো দল। রানা বললেন, ‘আমরা প্লেনের পেছনের দিকে বসেছি মাত্র। আকাশে ওড়ার পর দুই-আড়াই বছর বয়সী একটা বাচ্চা এগিয়ে এল। ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। দাদার কাছে এসে বলল, “আমি তোমাদের গান জানি। ” দাদা বললেন, “গাও। ” তারপর “কাগজের নৌকা” পুরো গানটা গেয়ে শোনায় ও।’
রাহুল আবার বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রাপ্তি হলো বাংলাদেশের গানের দলের যে ভাবনা, সেটা তৈরি করে দিয়েছে জলের গান। আগে ধারণা ছিল, গান গাইতে অনেক বড় দামি বাদ্যযন্ত্র লাগে। দল করতে অনেক কিছু লাগে। সেটা থেকে বেরিয়ে অন্য ধারণা দিয়েছে জলের গান। এটা গর্ব করেই বলতে পারি। 

‘তিন নম্বর প্রাপ্তি হলো মানুষের আদর। এমনও হয়, টং দোকানে চা বা পান খেতে গিয়েছি, দোকানি দেখে চিনে ফেলে আর বিল নিতে চান না। আবার শো শেষ করে মঞ্চ থেকে নামার পর মায়েরা হাতে টাকা গুঁজে দেন। বলেন, বাসায় নিয়ে খাওয়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল। সেটা তো সম্ভব না, তাই এই টাকা দিয়ে কিছু খেয়ে নেবেন।’ 

১২ বছরের এই প্রাপ্তিতে স্মরণ করলেন জলের গান ছেড়ে যাওয়া অনেককে। আলাদা করে নাম বললেন না। শুধু বললেন, ‘যে মানুষ দলে কাজ করতে আসে, তার সঙ্গে একটা আত্মার সম্পর্ক হয়ে যায়। সবাইকে প্রতিনিয়ত মিস করি।’
চারুকলায় পড়ার সময় রাহুলের বন্ধুত্ব হয় কনক আদিত্যর সঙ্গে। দুই বন্ধুর হাত ধরেই শুরু হয় জলের গান। কনক এখন ছুটিতে আছেন। এই ছুটি কত দিনের, রাহুল জানেন না।
জলের গান নামটার কারণও ব্যাখ্যা করলেন, ‘জলের নানান রূপ, রং, আকার ধারণ করার ক্ষমতা আছে। একেক জায়গায় গেলে একেক নাম। এ কারণে জলের গান। আমাদের গানটাও তো তা–ই, নানামাত্রিক।’
ভবিষ্যতে জলের গান নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন রাহুল বা অন্যরা? ‘আমাদের অতল জলের গান শিরোনামের অ্যালবামটা যখন প্রকাশ পায়, তখন সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন সদ্য প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আমি দেখতে চাই, এই জল কত দূর পর্যন্ত গড়ায়? ” আইয়ুব বাচ্চুর মতো আমিও অপেক্ষায় আছি। দেখি কত দূর গড়ায়।’ —বললেন রাহুল।

No comments:

Post a Comment