Monday, December 3, 2018

নারায়ণ চন্দ্রের আয়–সম্পদ বেড়েছে, বেড়েছে দেনাও

নারায়ণ চন্দ্রের আয়–সম্পদ বেড়েছে, বেড়েছে দেনাও

২০১৩ সালের চেয়ে বার্ষিক আয় ও সম্পদ বেড়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের। আগের চেয়ে এবার তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেশি। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ ও ব্যক্তিগত ধার মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেনায় রয়েছেন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে নৌকার প্রতীক নিয়ে সাংসদ হন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হন তিনি। এবারও তিনি খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন।
নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রার্থীরা তাঁদের সম্পদ ও দায়দেনা স্বজ্ঞানে তাঁদের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এবার হলফনামা ধরে প্রার্থীদের ব্যাংক ঋণ ও মামলা রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে।
খুলনা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গত ২৮ নভেম্বর জমা দেওয়া হলফনামা ও ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে নারায়ণ চন্দ্র তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা (সাংসদ হিসেবে পারিতোষিক বাদে)। মন্ত্রী হিসেবে পারিতোষিক বাদে এবার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। মন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবছর পারিতোষিক পাচ্ছেন ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তিনি তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছিলেন, কিন্তু এবার তা উল্লেখ করেননি।
এ ছাড়া বর্তমানে জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে দেখিয়েছেন তাঁর কাছে টাকা রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর আছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রীর টাকা আছে ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৬১ টাকা। আর স্ত্রীর আছে ১১ লাখ টাকা।
২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নারায়ণ চন্দ্রের কাছে টাকা ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রী ও তাঁর নির্ভরশীলদের নামে কোনো টাকা জমা ছিল না। তবে পোস্টাল, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমনতে বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯১২ টাকা। এ ছাড়া ২০১৩ সালে তাঁর স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র ছিল সাত লাখ টাকার। এবার স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকার।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর ও নির্ভরশীলদের নামে কোনো অর্থ জমা না থাকলেও বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে নিজের ৫ ভরি এবং স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ থাকার কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এবার শুধু স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
পেশা হিসেবে কৃষি ও ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কেপি ব্রিকস থেকে ২০১৩ সালে আয় ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এবার ওই ইটভাটা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি।
২০১৩ সালে দেওয়া হলফনামায় কোনো দায়দেনা ছিল না বলে উল্লেখ করেছিলেন। এবার মন্ত্রী ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫৮ টাকা। পাশাপাশি ৩৫ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ধার আছে বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর কৃষিজমি আছে ৪ দশমিক ১৭ একর। তাঁর স্ত্রীর নামে আছে ২ দশমিক ৭০ একর। অকৃষি জমি আছে দশমিক ৬৫ একর। ৪০ লাখ টাকা মূল্যের একটি দালান আছে তাঁর। ২০১৩ সালের হলফনামাতেও একই তথ্য উল্লেখ করেছিলেন।
ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আগের নির্বাচনের সময় ব্যাংক থেকে সব টাকা উঠিয়ে ইটভাটায় বিনিয়োগ করা ছিল। পরে ইট বিক্রি হয়ে গেলে ওই টাকা আবার বেরিয়ে আসে। এ কারণে বর্তমানে ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ বেশি। শুধু তা–ই নয়, এ কবছরে আয়ও বেড়েছে। ইটভাটার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। হলফনামায় কোনো তথ্য গোপন করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

No comments:

Post a Comment