Tuesday, December 4, 2018

গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ



গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ

গানের বন্ধুকে গান দিয়েই শ্রদ্ধাঞ্জলি। গান গেয়েই স্মরণ করা হলো গানের মানুষ আইয়ুব বাচ্চুকে। এর চেয়ে যথার্থ আর কী হতে পারে!
আইয়ুব বাচ্চু জীবৎকালে যাঁদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছিলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তাঁদের কণ্ঠে, বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজে সরব ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা ভবনের পরিবেশ। শুধু নীরব উপস্থিতি ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। সশরীরে নয়, ছবিতে। অনুষ্ঠানের শুরুতে যন্ত্রে ধরে রাখা আইয়ুব বাচ্চুর স্বর শোনা গেল, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো, অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো...।’
বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) আয়োজন করেছিল ‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’। শোকসভা নয়, সঞ্চালক মাকসুদ শুরুতে পরিষ্কার করে বললেন, ‘আমরা চাই বাচ্চুর জীবনকে সেলিব্রেট করতে, যেমন উচ্ছল, প্রাণবন্ত ছিল ও।’
সারা জীবন অগণিত মানুষের করতালি আদায় করা মানুষটির স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির পুরো পরিবেশ মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর ছিল। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সব সময় প্রাণোচ্ছল এই শিল্পী অনেক বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন। সহজেই সবাইকে আপন করে নেওয়ার মতো গুণ ছিল তাঁর।
১৯৮৭ সালের বামবার একটি কনসার্টের স্মৃতিচারণা করেন বর্তমান সভাপতি হামিন আহমেদ। কনসার্ট চলাকালে যান্ত্রিক গোলযোগে আয়োজনটি ভন্ডুল হতে চলেছিল। তখন সোলসের সদস্য আইয়ুব বাচ্চু গান গেয়ে, বাজিয়ে একাই পুরো ঘটনা আয়ত্তে নিয়ে আসেন। স্মরণ করতে এসে আধুনিক গানের শিল্পী রফিকুল আলম তাঁর গাওয়া আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতায়োজনে করা ‘স্বাধীনতা তুমি নয় মাস পর দেখা খোলা আকাশ’ গানটির কয়েকটি লাইন শোনান। ফিডব্যাকের ফুয়াদ নাসের বলেন, তাঁর মতো বন্ধুবৎসল মানুষ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। মা-ভক্ত আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি, যেমন শিখেছি মাকে আরও বেশি ভালোবাসতে।’
অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চুর ১৫টি গান গেয়ে শোনান বামবার সদস্যরা। এগুলোর মধ্যে ছিল ‘এখন অনেক রাত’, ‘রাতের তারার মতো’, ‘চাঁদ মামা’, ‘ফেরারি মন’, ‘গতকাল রাতে’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘ময়না’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো’, ‘বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। শেষে সবাই মিলে করেন, ‘চলো বদলে যাই’ গানটি।
বরাবরই আইয়ুব বাচ্চু চেয়েছিলেন, দেশের সব ব্যান্ড এক প্ল্যাটফর্মে এসে গান করবে। তাঁর সেই চাওয়া পূরণ হলো গতকাল রাতে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যান্ড নয়, বরং শিল্পীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গান করেন। বিষয়টিকে উল্লেখ করে শাফিন আহমেদ বলেন, ‘সংগীতাঙ্গনে সবাইকে যে একত্র করা যায়, আইয়ুব বাচ্চু সেটি করে দেখিয়েছেন।’
গতকাল সবাই যখন তাঁর গানগুলো গাইছিলেন, তখন আইয়ুব বাচ্চু অনতিক্রমণীয় দূরত্বে। তিনি কি দেখছিলেন, ছেড়ে যাওয়া সঙ্গীরা কী গভীর শ্রদ্ধা ও নিখাদ ভালোবাসায় মনে রেখেছেন তাঁকে? এ প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। তবে বলা যায়, দেহান্তর মানেই কারও কারও ক্ষেত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নয়। তাঁর সৃষ্টি ও কাজ কালোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে। মৃত্যুকে জয় করার উপায় না থাকলেও মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ওঠেন কেউ কেউ। রুপালি গিটার ফেলে আইয়ুব বাচ্চু সে পথেই এগিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment